আগুনে পোড়া রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসাছবি- সংগৃহিত

নিউজ ডেস্কঃ সচরাচর অগ্নীকান্ডে কাঁপছে দেশ তাই ভয়কে সঙ্গী করে প্রতিদিন চলছে আমাদের জীবন। জীবনকে সঁপে দিয়েছি নিয়তির কাছে, তাই নিজেদের প্রয়োজনেই আগুনে পোড়ার চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখা অত্যাবশ্যকীয়। তথ্যগুলো জেনে রাখলে কিংবা অন্যকে জানাতে সাহায্য করলে বেঁচে যেতে পারে আপনার বা আরো কয়েকজনের মূল্যবান জীবন।
আকস্মিক দুর্ঘটনায় বা মুহূর্তের অসতর্কতায় পুড়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক ও যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি ঘটে যেতে পারে। রান্নাঘর, মোমবাতি, হারিকেন, মশা মারার কয়েল, গরম পানি, গরম পানীয় এমনকি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো সাধারণ দৈনন্দিন বস্তু ব্যবহারের অসতর্কতা থেকেও হতে পারে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহারে অসতর্কতাও পুড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করাই কাম্য। তারপরও যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায়, জরুরিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এতে ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
হঠাৎ অগ্নিদুর্ঘটনায় পুড়ে গেলে প্রথম কাজ হলো, পুড়ে যাওয়ার উৎস থেকে সরে যাওয়া। ঘরে, কর্মক্ষেত্রে বা যেকোনো জায়গায় আগুন লেগে গেলে পানি দিয়ে আগুন নেভাতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া না গেলে পুরু কম্বল বা পুরু কাঁথা দিয়ে চেপে আগুন নেভাতে হবে।বিদ্যুতায়িত হলে দ্রুত বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।আগুন শরীরে লেগে গেলে মাটিতে গড়িয়েও আগুন নেভানো সম্ভব। এরপর যা করতে হবে, তা হলো আহত স্থানে প্রচুর পানি ঢালা। আক্রান্ত স্থানটি প্রবহমান পানিতে (ট্যাপের পানি) ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রাখতে হবে। এরপর পরিষ্কার, সুতি কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ঢেকে নিয়ে হাসপাতালে যান। আক্রান্তকে বারবার পানি বা স্যালাইন পান করতে দিন। হাত কিংবা পা পুড়ে গেলে আক্রান্ত হাত কিংবা পা যতটুকু সম্ভব, কম নাড়াচাড়া করতে হবে। যেমন পায়ের কোনো অংশ পুড়ে গেলে রোগীকে বসিয়ে বা শুইয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও রোগীকে হাঁটিয়ে নেওয়া উচিত নয়।
জরুরি চিকিৎসাত্বকের উপরিভাগের পোড়ার (অগভীর পোড়া) ক্ষেত্রে সাধারণত প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে, আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে যায়, সেখানে ফোসকাও পড়তে পারে। গভীরভাবে পুড়ে গেলে জ্বালাপোড়া তেমন হয় না, আক্রান্ত স্থান সাদাটে হয়ে যায়, ফোসকা পড়ে না। তবে পোড়া ক্ষত গভীর বা অগভীর যে রকমই হোক না কেন, শরীরের যত কম বা বেশি অংশই পুড়ে যাক না কেন, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করে কাছের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্রে যেতে হবে। সেই সুযোগ না পেলে নিকটস্থ শল্যচিকিৎসকের (সার্জন) শরণাপন্ন হতে হবে। সেই সুযোগও না পেলে যেকোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ক্ষতের মাত্রা নির্ণয় করে যতটা চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগ আছে, সেটি নিয়ে এরপর প্রয়োজনমতো বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের শরীরের কম অংশ পুড়লেও তা মারাত্মক হতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
মারাত্মক দুর্ঘটনায়ঃযেকোনো দুর্ঘটনায় মাথা ঠান্ডা রেখে জীবন বাঁচাতে হবে। অগ্নিদুর্ঘটনায় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগতে পারে, হাত-পা ভেঙে যেতে পারে, রক্তক্ষরণ হতে পারে। মাথায় আঘাত লাগলে, হাড় ভেঙে গেলে কিংবা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হলে অনেক সময় তা বাইরে থেকে বোঝা না-ও যেতে পারে। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি অংশ পুড়ে যাওয়া (শিশুদের সঙ্গে ১০ শতাংশের বেশি হলেই) তা মারাত্মক ধরনের তীব্র পোড়া। এ ছাড়া চোখ, কান, মুখমণ্ডল, গলা, আঙুল, কবজি, হাত-পায়ের তালু, পায়ুপথ ও এর আশপাশের অংশ অল্প পুড়ে গেলেও তা মারাত্মক।

কি করবেন, কি করবেন না?প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ছাড়া অন্য কিছুই ব্যবহার করবেন না। ঠান্ডা পানি, বরফ, কুসুম গরম পানি—কোনোটাই পুড়ে যাওয়া স্থানের জন্য উপযোগী নয়। খুব ঠান্ডা পানি দিলে আক্রান্ত স্থানের কোষগুচ্ছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর নির্ভর করবেন না। বাড়িতে নিজেরা বুদ্ধি করে কিংবা কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে লবণ মেশানো পানি, ভাতের মাড়, তেল, টুথপেস্ট, ডিম—এ রকম কোনো কিছুই প্রয়োগ করা যাবে না।
কাপড় বা কোনো কিছু দিয়ে আক্রান্ত স্থান বাঁধবেন না।
আক্রান্ত স্থানে সিলভার সালফাডায়াজিন মলম প্রয়োগ করা যায়, কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনো মলম, জেলি, মধু—কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। কপালে, চোখের কাছে সিলভার সালফাডায়াজিন মলম প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে; খুবই হালকাভাবে মলমটি লাগাতে হবে যাতে তা চোখে না চলে যায়।
সতর্ক থাকুনরান্নাঘরে ফোনে কথা বলবেন না। এতে অমনোযোগী ও অসাবধান হয়ে পড়তে পারেন।
কাপড়ে যেন আগুন না লাগে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। ঢিলেঢালা পোশাক, শাল, চাদর, ওড়না, শাড়ির আঁচল চট করে সরে গিয়ে আগুন লেগে যেতে পারে। তাই আঁটসাঁট হয়ে রান্নাঘরে যাবেন। দরকার হলে চাদর বা ওড়না খুলে রাখবেন।
কাজ শেষে অবশ্যই গ্যাসের চুলা নিভিয়ে দেবেন। চুলার আগুনে কাপড় শুকাতে দেবেন না।
সিলিন্ডার ও গ্যাসের সংযোগ ঠিকঠাক রাখুন। মাঝেমধ্যে ফুটো বা লিক আছে কি না, মিস্ত্রি ডেকে পরীক্ষা করুন।
সকালে দেশলাই জ্বালানোর আগে রান্নাঘরের জানালা খুলে দিন। বদ্ধ জমা গ্যাস যেন বেরিয়ে যায়।
গরম পানি, পানীয়, ডাল, তরকারি প্রভৃতি রাখুন সাবধানে, শিশুর নাগালের বাইরে। পানি গরম করার পাত্রে গরম পানি নিয়ে রান্নাঘর থেকে অন্য স্থানে যাবেন না। যে পাত্রে পানি গরম করা হবে, সেটির অর্ধেক বা দুই-তৃতীয়াংশ পরিমাণ পানি নিয়ে ফুটিয়ে নিন। চুলা নিভিয়ে দিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি যোগ করুন সেই পাত্রে। এবার চুলা থেকে পাত্রটি নামিয়ে নিয়ে বালতিতে এই পানি ঢেলে অন্যত্র নিতে পারবেন।
করোনাকালে বেশির ভাগ বাড়িতেই স্পিরিট, স্যানিটাইজার ইত্যাদি জীবাণুনাশকভর্তি বোতল বা কনটেইনার আছে। এগুলো রান্নাঘর ও চুলা থেকে দূরে রাখবেন। কোনো অবস্থাতেই এসব জিনিসের পাশে সিগারেট বা দেশলাই ধরাবেন না।
মাঝেমধ্যেই ঘরের বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডগুলো পরীক্ষা করিয়ে নিন। কোনো অবস্থাতেই নষ্ট বা সমস্যাযুক্ত সুইচ ব্যবহার করা যাবে না।
মুঠোফোন চার্জে দিয়ে কথা বলবেন না।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *