ভোট জালিয়াতি পাকিস্তানে তোলপাড়, সিইসি ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি

সিইসি ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবিসিইসি ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি

পাকিস্তানে সদ্যসমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির তথ্য প্রকাশ করেছেন রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলি চাতা। সাধারণ নির্বাচনে কারচুপিতে তার ভূমিকা সম্পর্কে মিডিয়ার সামনে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি পদত্যাগও করেছেন।

তার এই স্বীকারোক্তি পাকিস্তানজুড়ে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। আর এরই জেরে উঠেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্যসমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে কারচুপিতে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে মিডিয়ার সামনে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনারের স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি পাকিস্তানজুড়ে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। পরে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং তার সহযোগীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছে।

এছাড়া পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এই অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছে। তবে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) রাওয়ালপিন্ডির এই কমিশনারের মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পিএমএল-এন নেতা রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, রাওয়ালপিন্ডির কমিশনারকে একজন সাইকো বলে মনে হয়েছে এবং সে কারণেই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন।

অন্যদিকে ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের মুখপাত্র দাবি করেছেন, সাধারণ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা যে কথা ফাঁস করেছেন তাতে সিইসি সিকান্দার সুলতান রাজা এবং প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসাকে পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে লিয়াকত আলী চাতার এই বক্তব্য পিটিআই-এর অবস্থানকেই সমর্থন করছে যে, কীভাবে রাতের অন্ধকারে জনসাধারণের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার এই বক্তব্য নির্বাচনী কারচুপির সাথে জড়িত অন্যদের আসল চরিত্রও প্রকাশ করে দিয়েছে। পিটিআই মুখপাত্র আরও বলেছেন, রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার স্বীকার করেছেন- ৭০ হাজার ভোটেরও বেশি ভোটে এগিয়ে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়কে জালিয়াতি করে পরাজয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, লিয়াকত আলীর এই সাক্ষ্য পিটিআই-এর অবস্থানকে সমর্থন করে। তার কথাতেই বোঝা যায়, লোকেরা পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়েছে। রাতের আঁধারে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে জয়ী পিটিআই প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, নির্বাচনী কর্তপক্ষের উচিত পিটিআই-এর কাছ থেকে চুরি করে নেওয়া ৮৬ টি আসন অবিলম্বে ফেরত দেওয়া। একইসঙ্গে তিনি জনগণের ম্যান্ডেট চুরির সঙ্গে জড়িত সকলের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী শাস্তির দাবি জানান।
তদন্ত চায় নওয়াজের দলও

এদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নির্বাচনী জালিয়াতির এই অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছে। দলটির তথ্য সচিব মরিয়ম আওরঙ্গজেব কমিশনার চাতার ব্যবহৃত সমস্ত যোগাযোগ চ্যানেলের গভীর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তার নাম বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ তালিকায় (ইসিএল) রাখার দাবি জানিয়েছেন।

লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে আওরঙ্গজেব বলেন, এই কমিশনার কোনও আরও বা ডিআরও ছিলেন না, যারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের কাজ সম্পাদন বা বাস্তবায়নে কমিশনারের কোনও সাংবিধানিক দায়িত্ব বা কর্তৃত্ব নেই।’

এর আগে শনিবার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা ওই শহরে ভোট জালিয়াতির সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি নিজের ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারও দাবি করেন।
এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলী দাবি করেন, রাওয়ালপিন্ডিতে ১৩ জন প্রার্থীকে জোর করে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, এমন প্রার্থীকেও ভোট বেশি দেখিয়ে জয়ী ঘোষণা করেছি আমরা।’

লিয়াকত বলেন, ‘আমি রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনে অবিচার করেছি। এখানে আমি ভোট জালিয়াতির দায়-দায়িত্ব মেনে নিচ্ছি। এবং নিজেকে পুলিশে সোপর্দ করছি।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমি যা করেছি, সে জন্য আমার শাস্তি হোক। আমার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসিপির জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তারও শাস্তি হওয়া উচিত।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *