ভারতের নাগাল্যান্ড

আজব খবরঃ এমন একটি গ্রাম জমি থেকে সবজি তুলে রান্না-বান্না আর খাওয়া দাওয়া করতে হয় মিয়ানমারে গিয়ে, আর ঘুমাতে যেতে হয় ভারতে গিয়ে। ভারতেই আছে এমন আজব এক গ্রাম। এই গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে তার এক দিক ভারতে, অন্য দিক মিয়ানমারে। অর্থাৎ এই গ্রামের মধ্য দিয়ে ভারত-মায়ানমার, এই দুই দেশেরই সীমান্তরেখা চলে গেছে।


শুধু তাই নয়। এই গ্রামের গ্রামপ্রধানের বাড়ির বুক চিরে চলে গেছে সীমান্ত। ফলে বাড়ির একটা দিক থেকে গেছে ভারতে, অন্য দিক মিয়ানমারে। ফলে দুই দেশেরই নাগরিকত্ব ভোগ করেন গ্রামপ্রধান। ভারত বা মিয়ানমার যেতে তার কোনো ভিসা লাগে না। গ্রামপ্রধানের বাড়িতে হয় রান্না আর খাওয়াদাওয়া হয় মিয়ানমারে। আবার তিনি চাষাবাদও করেন মিয়ানমারে। ক্ষেতের তাজা শাকসবজি তুলে এনে রাঁধতে বসেন গ্রামপ্রধানের স্ত্রী ভারতে।


যে গ্রামের কথা বলা হচ্ছে তা ভারতের নাগাল্যান্ডের একটি গ্রাম। ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের জন্য একেবারে স্বপ্নের জায়গা এটি। পাহাড়, কুয়াশা, মেঘের সৌন্দর্য ছাপিয়েও আদিবাসীদের সভ্যতা-সংস্কৃতি নাগাল্যান্ডের মূল আকর্ষণ। এখানেই একটি ছবির মতো সুন্দর জেলা হল মোন। সেখানে আদিবাসী কোনিয়াকরা বসবাস করেন। মোনের একটি গ্রাম হল লংওয়া।
ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে ভারত-মায়ানমারের মধ্যে যে সীমান্ত টানা হয়েছিল তা এই গ্রামের মধ্যে দিয়েই গিয়েছিল। তাই গ্রামের অর্ধেকটা রয়ে গেছে ভারতে, আর বাকিটা মিয়ানমারে। লংওয়া গ্রামের লোকজন একইসঙ্গে মিয়ানমার ও ভারতে বাস করে। মিয়ানমার তাতে কোনও আপত্তি জানায়নি। দুই দেশেই তাদের অবাধ যাতায়াত। অনুমতির দরকারই পড়ে না।
এ গ্রামের কোনিয়াকরা আবার দুর্ধর্ষ মুণ্ডু শিকারি। ব্রিটিশ মিশনারি আর সেনাবাহিনীর চোখ রাঙানিতে মুণ্ডু শিকারের প্রখা বন্ধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও কোনিয়াকদের ঘরে ঢুঁ মারলে পিতলের খুলির মালা পাওয়া যাবে। কোনিয়াকরা বিশ্বাস করত যুদ্ধে যে গোষ্ঠী জিতবে তারা শত্রুপক্ষের মুণ্ডু কেটে বিজয়ের প্রতীক হিসেবে রেখে দেবে। মুণ্ডু শিকারের ওই প্রথা ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই একটু একটু বন্ধ করা হয়। যদিও এমন কাজ আর এখন গ্রামে হয় না। শিক্ষার আলো ঢুকেছে লংওয়া গ্রামে। আইনের কড়া বাঁধুনিতে মুণ্ডু শিকারের প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *