কে এই বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি

রাশিয়ার প্রধান বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিরাশিয়ার প্রধান বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাশিয়ার বিরোধী দলীয় সমাজের প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন নাভালনি। তার সমর্থকরা তাকে ‘রাশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা’ হিসেবে অভিহিত করতেন। তাদের আশা ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা যেমন ২৭ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছিলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্র প্রধান হয়েছিলেন; তেমনই নাভালনি এক সময় জেল থেকে মুক্তি পাবেন এবং ক্ষমতায় আসবেন।
২০২০ সালে সাইবেরিয়ায় নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসা নেওয়ার পর বিদেশে আরাম-আয়েশের জীবনের বদলে রাশিয়ায় ফিরে এসেছিলেন নাভালনি। দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।সবকিছু জেনেও ২০২১ সালে যখন নাভালনি ফিরে এসেছিলেন; তখন বিরোধী মতগুলোর মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
পরিচিত লাভ যেভাবেঃসাবেক আইনজীবী নাভালনি তার ব্লগের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। সেসব ব্লগে তিনি রাশিয়ার অভিজাত ও রাজনৈতিক শ্রেণির ব্যক্তিবর্গের দুর্নীতির বিশাদ তথ্য প্রকাশ করতেন। তিনি বলতেন, রাশিয়া ‘জালিয়াত আর চোরদের’ দ্বারা চলছে।
অ্যালেক্সি নাভালনি ২০০০ সালের দিকে কট্টোর জাতীয়তাবাদী ছিলেন। ওই সময় জাতীয়াতাবাদী সমাবেশগুলোতে তিনি অংশ নিতেন। এসব সমাবেশ থেকে অভিবাসনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের দাবি ও সমালোচনা করা হতো। তিনি এতটাই জাতীয়তাবাদী ছিলেন যে ২০০৭ সালে তাকে বিরোধী দল লিবারেল ইয়াবলোকো থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে পরবর্তীতে অবস্থান পরিবর্তন করেন তিনি।  
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছের মানুষদের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করতে ইন্টারনেট, ড্রোনসহ অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতেন তিনি।
২০১১ সালে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে রাশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। ওই সময় এই বিক্ষোভে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে ছিলেন নাভালনি। বিক্ষোভে জড়িত থাকাদের মধ্যে যেসব নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; তাদের মধ্যে প্রথম ছিলেন তিনি।
নাভালনির দাবি নিয়ে রাশিয়ার সরকারের কি বলছেন?
নাভালনি প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ তুলেছিলেন; সেগুলোকে ভিত্তিহীন হিসেবে অভিহিত করেছিল দেশটির সরকার। এমনকি উল্টো সরকার দাবি করেছিল, নাভালনি যুক্তরাষ্ট্র এবং সিআইএর-এর দোসর। যিনি বিক্ষোভ সৃষ্টি করে রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করায় নাভালনিকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিভিন্ন অপরাধে তাকে আরও ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরমাধ্যমে তার নামের পাশে ৩০ বছরের কারাদণ্ড যুক্ত হয়। এই দণ্ড ভোগের সময়ই কারাগারের ভেতর তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যু নিয়ে যা বলেছিলেন নাভালনি
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মৃত্যু নিয়ে কথা বলেছিলেন নাভালনি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, “যদি তারা আমাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটির অর্থ আমরা অনেক শক্তিশালী। আর আমাদের এই শক্তিকে ব্যবহার করতে হবে; ছেড়ে দেওয়া নয়।”
জীবনের লক্ষ্য কি ছিল
২০১১ সালে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নাভালনি বলেছিলেন তিনি কোনো ‘ভয়কে’ ভয় পান না। অপরদিকে জীবনের লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই। কিন্তু রাশিয়ায় সত্যি বলতে কোনো নির্বাচন নেই।”
পুতিনকে নিয়ে যা বলেছিলেন নাভালনি
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন কট্টর সমালোচক ছিলেন নাভালনি। তিনি পুতিনকে ‘দুর্নীতিবাজদের মদতদাতা’ হিসেবে অভিহিত করতেন। ২০২২ সালে যখন ইউক্রেনে পুতিন হামলা চালান, তখন তাকে ‘পাগল’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন নাভালনি।
সূত্র: রয়টার্স

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *