ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলে বাংলাদেশি নারীসহ নিহত ২

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের জলপাইতলীতে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলে বাংলাদেশি এক নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। একটি বাড়িতে সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত হয়ে ওই দুজনের প্রাণহানি হয়।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া দুইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত বাংলাদেশি নারীর নাম আসমা খাতুন। নিহত অন্যজনের নামপরিচয় জানা যায়নি। তিনি রোহিঙ্গা যুবক বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। কয়েক বছর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে বাদশা মিয়ার বাড়িতে কাজ করতেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, বেলা সোয়া ২টার দিকে দুইজন নিহত হয়েছেন। খবর পেয়ে তিনি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

নিহত আসমা খাতুন ঘুমধুম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড জলপাইতলীর এলাকার বাদশা মিয়ার স্ত্রী।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আনোয়ান হোসেন জানান, দুপুরে ঘরে ভাত খাওয়ার সময় মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে মর্টারশেল এসে পড়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আসমা খাতুন ও এক যুবক নিহত হন।

কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে গত বছর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) লড়াই চলছে। মাঝে কিছুদিন উত্তেজনা কমে এলেও কয়েকদিন ধরে আরও দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির সময় মাঝেমধ্যে মর্টারশেল ও গুলি বাংলাদেশে এসে পড়ছে।

গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি এলাকায় গোলাগুলির সময় তুমব্রু সীমান্তের কাছাকাছি শূন্যরেখায় মর্টারশেলের বিস্ফোরিত একটি অংশ এসে পড়েছিল। তখন আতঙ্কে সীমান্তের কাছাকাছি পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অর্ধদিবস ছুটি দেওয়া হয়েছিল।

পরদিন ৩০ জানুয়ারি রাতের গোলাগুলির ঘটনায় বিস্ফোরিত গোলার তিনটি অংশ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছিল। এর প্রেক্ষিতে পরদিন দুপুরে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেন। তিন দিন বিরতির পর ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ফের তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাগাতার বন্দুকযুদ্ধের পর রাতে প্রায় ৪ ঘণ্টা বিরতি শেষে আবার রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলছে বন্দুকযুদ্ধ। বিদ্রোহীদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) অন্তত ৩০ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের চলমান সংঘর্ষের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশেও। এ নিয়ে সীমান্তের পাশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্ত এলাকায় এমন থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে মর্টারশেলের আঘাতে বাংলাদেশি এক নারীসহ দুইজন নিহত হওয়ার খবর এলো।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *