নৌকায় কোন মাঝি মাল্লাকে দেখা যাবে না! একটা মানবাকৃতি দেখা যাবে! যাকে দেখলে একবার মনে হবে সে একজন পুরুষ মানুষ পরক্ষণেই মনে হবে না না ভুল দেখেছি একজন নারী, মানবী। আবার মনে হবে সব ভুল এটা কোন মানুষ না মানুষের ছায়া মাত্র। বিভ্রান্তিকর না বিষয়টা? না পুরুষ, না নারী। না মানব না মানবী। না কোন মনুষ্য। সম্পূর্ণ চিত্রকর্মটাই আসলে হবে বিভ্রান্তিকর। কারণ গল্পের লেখক পাঠক মনে একটা ঘোর তৈরি করতে চাচ্ছে। বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে তার গল্পের পাঠককে! তার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে উপরের ধূম্র জালে আবৃত চিত্রকল্পটি গল্পকথকের গল্পের অংশ নয়। গল্পটা কোন এক ভাবে শুরু করতে হবে তাই গল্পকথক খানিক ফন্দি ফিকির করে অল্পকথায় তার গল্পের শুরুটা করে দিলেন। কারণ হিসেবে সে একটা হেতু অবশ্য প্রদর্শন করে থাকে আর তা হচ্ছে সে গল্পের ভালো সূচনা আঁটতে অপটু। আসলে অপটুই বটে। এখনো যে সে তার গল্পের শুরুটাই শুরু করতে পারলো না!
গল্পটি মূলত আমার গল্প! আমার বলতে আসলে আমি না। আমি না বলতে আসলে গল্প কথক না আমি তাই বুঝাতে চাচ্ছি! এই “”আমি”” যে বললো যে “”গল্পটি মূলত আমার গল্প”” সে আসলে অন্য আমি, যেই আমি তার নিজের গল্পটা গল্পকথক আমির কাছে বর্ণনা করেছে! পাঠক গন বিষম খাবেন না। কারণ এখন বিষম খাওয়ার মতো তেমন কিছুই ঘটেনি! আমি বোঝাতে চাচ্ছি আমি হচ্ছি গল্প কথক কিন্তু গল্পটা আমার না,আর যে যে বলছে গল্পটা আমার সেই হচ্ছে মূলত গল্পের হোতা যাকে বলে উনার আরকি,,হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন গল্পের মালিক। আমি গল্প কথক হিসেবে আমির গল্পটি নেরেট করছি মাত্র। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে বলা যায় গল্পে দুই জন আমি রয়েছে যার একজন গল্পের স্রষ্টা আর একজন গল্পের কথক বা পাঠকের কাছে কল্পের বর্ণনাকারি। এখন আমি মানে প্রথম আমি না দ্বিতীয় আমি যে কিনা গল্পকথক হিসেবে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সে ধরে নিতেই পারি পাঠক গন খানিক বুঝতে পেরেছেন কে কোন আমি! গল্পের খাতিরে তৃতীয় কোন আমির খোঁজ আমরা পেতেও পারি বৈকি! এতে পাঠক সমাজের মাঝে বিশেষ কোন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে বলে গল্প কথক আমি মনে করেন না অথবা করিনা!
যাই হোক গল্প শুরু করা যাক। গল্পটা হচ্ছে ভালোবাসার না-গল্প অথবা ন-গল্প যেখানে ভালোবাসা থাকবে কিন্তু কোন গল্প থাকবে না! অথবা বলতে পারেন গল্পটাই থাকবে কিন্তু পাঠক কোন ভালোবাসা খুঁজে পাবে না!
গল্পটা মূলত আমির ত্রি-সত্তার, যার একটি হচ্ছে অন্তর্মূখী সত্তা, একটি বহির্মুখী সত্তা আর অপরটি মধ্যবর্তী সত্তা; যে না অন্তর্মূখী না বহির্মূখী।
আমির এই অন্তর্মুখী সত্তা বড়ই কঠিন চিজ,,, সে খুব একঘেয়ে নির্দয় কিছিমের সত্তা। বলা চলে বাঙালি নারীর মতো যার বুক ফাটে তো মুখ ফোটেনা। সে তার কোন বিষয় কারো সাথে ভাগাভাগি করে না। ভাগাভাগি শব্দটা আসলে কেমন যেনো দৃষ্টি কটূ মনে হচ্ছে আমরা বরং বলি যে সে তার কোন বিষয় কারো সাথে শেয়ার করেনা! মাঝে মাঝে তার মনে হয় কিছু কথা শেয়ার করে, এই ভেবে সে শুধু বলে “”তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,,,,,,, “” এইটুকু বলেই সে কথায় ইস্তফা দেয়।
অপরদিকে বহির্মুখী সত্তা অনেকটা সস্তার তিন অবস্থা। সে তার সব বিষয় অন্যদের সাথে শেয়ার করে। এ এক আজব পাবলিক, মানুষ তার কথা শুনতে চাইলেও শেয়ার করে না চাইলেও শেয়ার করে। মানুষ তার কথায় পাত্তা দিলেও শেয়ার করে না দিলেও শেয়ার করে। নিজের লাভ হইলেও শেয়ার করে, আবার লস হইলেও শেয়ার করে। নিজের ভালো হবে কি ক্ষতি হবে সেদিন তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। সে খুবই অদ্ভুত ধরনের উদার জিনিস।
অন্যপক্ষে আমাদের আমির তৃতীয় সত্তা খুবই বুদ্ধিমান বিচক্ষণ মহাপুরুষ, যে কিনা তা কিছু বিষয় শেয়ার করে আর কিছু বিষয় সিন্দুকে তালাবদ্ধ করে রাখে। সে বোঝে কোনটায় তার খানিক লাভ হবে আর কোনটায় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তাই সে ভেবে চিন্তে আবার ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়! কোন কথা কারে বলা যা আর কারে বলা দায় সব কিছু তার চোখেই যেনো ভাসে!
আমাদের আমির বহির্মুখী সত্তা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও মধ্যবর্তী সত্তাকে নিয়ে কোন রকমের জটকি ঝামেলা নাই বললেই চলে। মূল সমস্যা হচ্ছে অন্তর্মুখী সত্তাকে নিয়ে। কারণ তার ভাবাবেগে, অনুভূতি চরম মাত্রার। কিন্তু সে তার কিছুই প্রকাশ করে না অথবা চারত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে পারেনা। এই খানে আমরা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য না বলে মাধুর্য বলি তাহলে শুনতে অনেক কিউট লাগবে। আরে আমরা তো সবজান্তা শমশের। সর্বকর্মা কুতুবউদ্দিন ও বলা যায় আমাদের। তাই আমরা গল্পে যা খুশি তাই করতে পারি! কি পারিনা?
যাই হোক না কে, আমরা যাই ফালাইতে পারি আর না পারি শব্দ নিজেদের ইচ্ছে মতো পরিবর্তন করতেই পারি। তাই আমরা চারিত্রিক মাধুর্যই বলবো। আমাদের অন্তর্মুখী সত্তা চারিত্রিক মাধুর্যের কারনে তার ভাবাবেগে, মনের চরম অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। আর এইটাই হচ্ছে সমস্যা, আই মিন মেইন প্রব্লেম। এইটা প্রব্লেম কেন? কারণ হচ্ছে সে সব কিছু জানে, বোঝে, কিন্তু প্রকাশ পারে না। আর না প্রকাশ করতে পারা না জানা আর না বোঝারই নামান্তর। আর এইখানে গল্প বেশ বেরসিক হয়ে গেছে।
কি সব হাবিজাবি বকবক চলতেছে। গল্প কথকের মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। তাই এইখানে আমরা আরেক জন আমির আবির্ভাব ঘাটাইবো। তার আগে প্রথম আমির আরেকটা পরিচয় দেয়া আবশ্যক মনে করে দ্বিতীয় আমি যে কিনা গল্পের কথক। তো তা প্রথম আমির আমার দ্বিতীয় পরিচয় কি? সে কি কুলি, সে কি মুটে বাহন করে বেড়ায়? কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলে কি তার দেখা পাওয়া যাবে?? আরে না সে কবিতা বহন করে। এক হিসেবে দেখতে গেলে সে কুলিই বটে। কিছুতো সে বহন করে। কিন্তু আমরা তাকে কুলি বলতে পারিনা কারণ সে মুটে বহন করে না সে কবিতা বহন করে মাঝে মাঝে। তাই আমরা তাকে কবি বলতে পারি তবে সম্পূর্ণ কবি না। তাকে আমরা বলবো সাময়িক কবি। কারণ গল্পের এই পর্যায়ে সে তার বহন করা কোন এক কবিতার শেষের দুই পঙক্তি আমাদের সামনে উপস্থাপন করবে।
“”রাত জোনাকি ভালোবাস কি?
সবাই বাসে, আমি পারিনা।””
খুবই ফালতু কবিতা! তবুও আমরা তাকে সাময়িক কবিই বলবো, কারণ এর মাধ্যমেই রস যুক্ত তৃতীয় আমির আগমন ঘটে গেছে। এই তৃতীয় আমিকে আমরা রাত জোনাকি বলে ধরে নিলাম। রাত জোনাকি আমাদের গল্পের রূপকার প্রথম আমির খুবই ঘনিষ্ঠ জন। গল্পে, কথা, মননে, চিন্তায় তার বসবাস যা আমাদের প্রথম সত্তা যে কিনা অন্তর্মুখী সত্তা বলেই আমাদের কাছে পরিচিত সে সব জানে এই তৃতীয় আমির বিষয়ে। সে শুধু প্রথম আমির মনের কথাই জানে তা না সে আমাদের তৃতীয় আমির মনের কথাও জানে। সে তার মনের প্রতিটি ভাজ উল্টেপাল্টে দেখে নেয়া পাবলিক। সে তৃতীয় আমির মনের প্রতিটা রঙ ও চিনে। আর এটাই হচ্ছে প্রব্লেম ইয়ে মানে সমস্যা। মহা সমস্যা যারে বলে! যে সব কিছু জানে কিন্তু কিছু বলতে পারে না।
হঠাৎ একদিন আমাদের রাত জোনাকি মানে তৃতীয় আমির একটা চিঠি আসলো। খুবই প্রমপূর্ণ একটা চিঠি যাতে রয়েছে ভালোবাসার না-গল্প অথবা ন-গল্প! চিঠিটা আমাদের পড়া উচিৎ বলেই আমি মানি দ্বিতীয় আমি গল্প কথক মনে করি!
“”আমি তোমার মাঝে আমাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে চাই,,,,
তুমি কি আমার ছোট ছোট স্বপ্নের কারণ হবে যা আমি রোজ ভাবি??? তুমি কি আমার সেই মানুষটি হবে যার কথা ভেবে আনমনে হাসবো??? তুমি কি আমার ভালো থাকার কারণ হবে?? তুমি কি গুছিয়ে দিবে এই এলোমেলো মানুষটাকে?
তুমি কি জানো আমার প্রতিটা দিনের শুরুতে তুমি থাকো,,? তুমি কি জানো আমার ক্লান্ত সময়ের প্রশান্তি তুমি? তুমি কি জানো আমার প্রতিটা ভাবনায় তুমি বিরাজ করো??
যদি প্রশ্ন করো কতটা ভালোবাসো!!! বলবো একবার চোখ বন্ধ করে মজবুত ভাবে আলিঙ্গন করে দেখো উত্তর পেয়ে যাবে!!
কি ভাবছো, এতো কেনো ভালোবাসি?? আমার ভালোবাসায় কোন কারণ নেই, কারণ থাকলে আর ভালোবাসা থাকে না তখন স্বার্থ হয়ে যায়,,,বড্ড বেশি ভালোবাসি যে তোমাকে,,
যদি কখনো খুব জানতে ইচ্ছে করে কতটা ভালোবাসি তোমাকে আমার শহরে এসো দেখবে সেখানে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই,,,দেখবে তোমাকে ভেবে রোজ কষ্ট পাওয়া মানুষ আর কেউ না আমিই!
এখন কেনো জানিনা ভুলে যেতে ইচ্ছে করে, তোমাকে না নিজেকেই,,,,এবার আর নিজের মতো করে নিজেকে চাই না,,তোমার মতো করে চাই,,,,দেবে কি গুছিয়ে তোমার মতো করে আমাকে??
আসবে কি আমার পৃথিবীতে আমার হয়ে?? বাসবে কি ভালো যতটা আমি বাসি তোমায়?
তুমি কি জানো আমার ভালো থাকার হাজারটা কারণের মাঝে তুমি অন্যতম,,, আমার হাজার ভাবনা গুলো ভেবে দেখো, ভাবনা শেষে নিজেকেই খুঁজে পাবে।।।
আমি হারিয়ে না খুজে পেতে চাই নিজেকে তোনার মাঝে,,,,
আরো কত শত বার বললে বুঝবে,,,, ভালোবাসি!! হবে কি আমার হাজার স্বপ্নের কারণ??? আসবে কি আমার পৃথিবীতে?? ঘুরবে কি আমার শহরে??
তোমাকে আটকে না আগলে রাখতে চাই ❤ যে দিনের শুরুতে তুমি নেই সেই দিনটাই চাইনা,,, নিজেকে হারিয়ে তোমাকে পেয়েছি,,,,তোমাকে হারায়ে দেই কি করে বলো,,,,,
আমার লেখা গুলোয় আমি শুধু লেখা হয়েই রয়ে গেলাম!”””
কবি ও লেখক পরিচিতি
Syed Mahfuz
Student
Nabinagar, Enayetnagar, Fatulla, Narayanganj