এই তোমার লিজার সাথে এতো কিসের কথা? সারাদিন লিজা তোমাকে কেন খুঁজে? আমি তোমাকে বলে দিলাম তুমি লিজার সাথে একদম কথা বলবা না। অন্যদিক থেকে এবার নিহাল বলল,তোর কি সমস্যা!আমি সব মেয়ের সাথেই কথা বলতে পারি, আমি কারো সাথে কথা বলতে তোকে জিজ্ঞেস করবো? ছোট ছোটর মত থাক্,আর শোন সাথী তুই আমার ছোট বোন,আর তুই আমাকে তুমি করে কেন বলছিস? সাথী বলে ভাইয়া দেখো ছোট ছোট বলবানা আমি ইন্টার পাষ্ট ইয়ারে পড়ি। আর আমি তোমার সাথে অন্য কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারিনা। তুমি কেন বুঝোনা, আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবোনা এসব কথা বলে সাথী চলে যায়।আর নিহাল পেছন থেকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। সাথী আর নিহাল কাজিন,নিহাল সাথীর থেকে তিন বছরের বড়, নিহাল সবই জানে বুঝে কিন্তু মেনে নিতে পারেনা। কারণ, নিহাল জানে ওদের পরিবার এটা কখনে মানবেনা। নিহাল খুব ভাল করে জানে ওদের কাকাও মামাতো বোনকে বিয়ে করার কারণে এখনো ঘর ছাড়া। নিহালদের পরিবার যৌথ,সাথী ওর চাচাতো বোন তারা একসাথেই থাকে।নিহাল বাড়িতে আসে সাথীও দৌড়ে এসে বলে ভাইয়া তুমি আসছো,হাত, মুখ দুয়ে নাও আমি খাওয়ার দিচ্ছি। নিহাল বলে তুই দেওয়া লাগবে না, মা কৈই?আমাকে মা-ই আমাকে খেতে দিবে।সাথী বলে জেঠি মা ভাইয়াকে খেতে দিচ্ছি কিন্তু ভাইয়া বলছে খাবে না! নিহালের মা ঐদিক থেকে ডাক দিয়ে বলে, নিহাল খেয়েনে আমি এইদিকে একটু ব্যাস্ত আছি।নিহাল আর কোন কিছু না বলেই খেতে বসলো। এইদিকে সাথী কতো কথা বলছে কিন্তু নিহাল একদম চুপ করে আছে।নিহাল ঠিক করছে এখন থেকে সে আর সাথীর সাথে কোনো কথা বলবেনা। সাথী বলল ভাইয়া তুমি জানো আমি কাল রাতে সপ্নে দেখেছি তোমার আর আমার বিয়ে হচ্ছে। নিহাল কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে উঠে চলে যায়। সাথী নিহালের রুমের সামনে গিয়ে বলে ভাইয়া আসবো? নিহাল বলে কোনো দরকার থাকলে আয় না হলে আসার দরকার নেই। সাথী রুমে এসে বলে আচ্ছা ভাইয়া আমার তোমাকে ভালো লাগে এটা কি আমার দোষ?নিহাল বলে আচ্ছা তুইতো সব জানোস তাহলে এসব কেন করেছিস? আমাদের পরিবারে এটা কখনো মানেনি আর কখনো মানবে ওনা,শোন তুই অনেক দিন ধরেই পাগলামি করতেছস আমি এতোদিন কিছু বলিনি।তুই যদি সব সময় এরকম করিস তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। আমি চাইনা কাকার সাথে যেটা হইছে সেটা আমার সাথেও হোক। আর তুই ভুলে যাস কি করে? যে ভাল বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে, তোর বিয়ের আর ১২দিন বাকি।সাথী এবার নিহালের পায়ের কাছে বসে যায়, নিহালের পা দুটো ধরে বলতে থাকে ভাইয়া আমি বিয়েটা করতে পারবোনা, তুমিতো জানো আমি তোমাকে কতোটা ভালবাসি! তোমাকে ছেড়ে আমি অন্য কারো কাছে গিয়ে সুখী হতে পারবোনা। নিহাল এবার সাথীকে তুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই-ই শুধু আমাকে ভালবাসছিস! বলল নিহাল।আমিও তোকে অনেক ভালবাসি, সেজন্যই আমি ছাড়া কোন ছেলে তোর কাছে আসতে পারেনি। তুই বাড়ি থেকে বেরোলেই আমি বের হতাম, সব সময় তোর খেয়াল রাখতাম।আমি দেশের বাইরে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পরেও যায়নি শুধু তুই আমার চোখের আড়াল হোবি বলে।সাথী বলে ভাইয়া তহলে কেন এমন করছো?চলো আমরা কোথাও চলে যাই! নিহাল সাথীকে সরিয়ে বলল,আমি এটা করতে পারবোনা। তুই যদি আমার ভাগ্যে থাকিস তাহলে থাকবি, আমি কাউকে কষ্ট দিয়ে তোকে পেতে চাইনা। আর আমি এখন এটাও চাইনা তুই তোর বিয়ে পর্যন্ত আমার সাথে কোনো কথা বলিস। এসব বলে নিহাল চলে যায়। সাথী খুব চুপচাপ হয়ে যায় আর কারে সাথেও কোনো কথা বলেনা,নিহালের কথামতো তার সাথেও কোনো কথা বলেনা।পরিবারের সবাই অবশ্য তাকে দেখে অবাক আর ভাবে সামনে বিয়ে সবাইকে ছেড়ে যাবে তাই মনখারাপ। এর মধ্যে বিয়ের তারিখটাও চলে আসে, আজকে সাথীর হলুদ আর কাল বিয়ে। নিহাল-ই সব কাজ করছে অবশ্য তাকে দেখে মনে হচ্ছেনা তার ভিতরে অনেক চাপা কষ্ট জমে আছে! হলুদের অনুষ্ঠান শেষে সাথী নিহালকে ডাক দেয়, নিহাল এসে দেখে সাথী ছাদের এককোণে দাড়িয়ে আছে।নিহাল বলে , হুম বল? সাথী ;আমি বলবো? তোমার কি কিছু বলার নেই? নিহাল বলে কি আর বলবো! বলতে গেলে অনেক কথাই আসবে!তবে হ্যা, এটাই শুধু বলবো তুই ভালো থাকিস,আর সকলকে ভাল রাখিস। আচ্ছা ভাইয়া আমাদের আর এভাবে কথা বলা বা দেখা হবে না? বলল সাথী। নিহাল বলল ডেসটিনি কখোন কি হয় জানিনা! তুই রুমে যা কাল অনেক দখল যাবে, গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। সাথী এবার নিহালকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর কাঁধে, কিছুক্ষণ পরে সাথী দৌড়ে চলে যায়। আজ সাথীর বিয়ে, বউ সাজাতে খুব সুন্দর লাগছে। নিহাল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!সবাই বরের জন্য অপেক্ষা করছে, নিহাল মনে মনে বলছে, বর আসতে আর একটু দেরি হোক। তারা দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে আর কাঁধছে,নিহাল আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজের চোখের পানি লুকাতে কিন্তু পারছেনা। হঠাৎ শুনে সাথীর আব্বু মোবাইলে কারো চিৎকার করছে যায়,সবাই দৌড়ে যায় আর জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?সাথীর আব্বু জানায়, সাথীর সাথে যার বিয়ে হওয়ার কথা সে নাকি অন্য মেয়ের সাথে পালিয়ে গেছে। সাথী এইদিকে অবশ্য খুশি হয়েছে। আশেপাশের লোকেরা বলতে লাগলো, আহারে মেয়েটা এভাবে ঠোকলো?ওর বিয়ে ভাঙ্গার কথা শুনলে কে ওকে বিয়ে করবে? কেউ বলছে কাকে বিশ্বাস করা যায়? সবাইকেতো দেখতে ভালোই মনে হয়। মেয়েটার জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো। আসলে আশেপাশের মানুষের যা কাজ,তারা এসব বলা স্বাভাবিক। আর সবার এসব কথা শুনে সাথীর আব্বু অসুস্থ হয়ে যায়,আর নিহালের আব্বুকে ধরে বলে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেলো। তুইতো জানোস একটা মেয়ের এভাবে বিয়ে ভাঙ্গা মানে তার জীবন শেষ । নিহালের আব্বু তার ভাইকে এভাবে অসহায় অবস্থায় দেখে বলে, সাথীর আজকেই বিয়ে হবে, সাথীর আব্বু বলে কীভাবে হবে এতো তাড়াতাড়ি? ছেলে কোথায় পাবো? নিহালের আব্বু নিহালের দিকে তাকিয়ে বলে, কিরে তুই ওকে বিয়ে করবি? নিহাল তার আব্বুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! সাথীর আব্বু তখন-ই বলে, না এট কি করে হয়? আমাদের পরিবারে এসব হতে পারেনা। নিহালের আব্বু তার ভাইকে চুপ করিয়ে বলে, আমাদের কাছে আমাদের মেয়ের সম্মান আগে পরিবারের সম্মান নয়। নিহালকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই বিয়েতে বসিয়ে দেওয়া হয়, বিয়েটাও হয়ে যায়। সাথী বলে, ভাইয়া তুমি আমার জামাই! আমার বিশ্বাস -ই হচ্ছেনা! নিহাল বলে এখনো ভাইয়া ডাকছিস কেন? তুমিওতো তুই করেই বলছো আমাকে নিহাল বলল,আচ্ছা এবার সবই হবে। আর আমি যে তোকে বলতাম ডেসটিনির কথা আসলে আমাদের এক হওয়াটাই ডেসটিনি ছিল 😍

কবি ও লেখক পরিচিতি
Suaraiya Hoque
Student
Feni

September 8, 2021 published at JAR BOOK

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *