গাজায় এখন যা ঘটছে তা গণহত্যা। ফিলিস্তিনি জনগণের বেঁচে থাকার এবং তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মানিতে ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
শনিবার তুর্কি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সবসময়ই গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। গাজায় যা ঘটছে, আমি মনে করি এটি একটি গণহত্যা। আমরা কখনই এটিকে সমর্থন করি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়, গাজার জনগণের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমাদের উচিত তাদের সাহায্য করা এবং এই আক্রমণ ও যুদ্ধ বন্ধ করা।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের জন্য বাংলাদেশ সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বিশ্বকে ‘ভুক্তভোগী শিশু, নারী ও ফিলিস্তিনের জনগণকে’ সমর্থন ও সাহায্য করার আহ্বান জানান।
দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে পরিকল্পিত ইসরায়েলি অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনোই এ ধরনের আক্রমণকে সমর্থন করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার থাকা উচিত, এটি স্পষ্ট। দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।
গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে পূর্বাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি রাফাতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে অভিযান না করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। গত জানুয়ারিতে জাতিসংঘের আদালত একটি অন্তর্র্বতী রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের গ্যারান্টি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।
শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকায় ৭ অক্টোবর থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮ হাজার ৮৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছে ৬৮ হাজার ৬৭৭ জন।
বিবৃতিতে গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়েছে কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১২ হাজার ৬৬০ শিশু এবং ৮ হাজার ৫৭০ জন নারীকে হত্যা করেছে। অন্তত ৭ হাজার (যাদের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু) এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা বা নিখোঁজ রয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় গাজায় ৭০ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ৯০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
গাজায় ৩৪০ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং ৪৬ জন সিভিল ডিফেন্স অফিসারকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন ১৩০ সাংবাদিক।