সারাদেশে ১ হাজার ২৭টি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই প্রতিবেদন দাখিল করে অধিদফতর।
শুনানিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, সারাদেশে অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১ হাজার ২৭টি। এছাড়া নিবন্ধিত রয়েছে ১ হাজার ৫২৩টি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনের ওপরে আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া আরজু। রিটের পক্ষে আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। শুনানির সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সুন্নাতে খৎনা করাতে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল শিশু আয়ানকে। অনুমতি ছাড়াই ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সুন্নতে খাৎনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। অস্ত্রোপচারের সময় অবস্থা বেগতিক দেখে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ থেকে আয়ানকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে টানা সাত দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত রোববার মধ্যরাতে না ফেরার দেশে চলে যান শিশু আয়ান।
ঘটনার পরপরই স্ব-প্রণোদিত হয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ১২ জানুয়ারি অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান জানান, শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
এ সময় হাসপাতালটির লাইসেন্স না থাকলে তদন্তাধীন বিষয় হওয়ায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। যদিও এর ১৪ জানুয়ারি হাসপাতালটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। জানানো হয়, সম্প্রতি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুতে তার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদফতরের পরিচালকের (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) নেতৃত্বে ১০ জানুয়ারি হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রদত্ত লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়।
এছাড়া দফতরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নিবন্ধন বা লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। ফলে হাসপাতালটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর গত মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলাটি দায়ের করেন তার বাবা মো. শামীম আহমেদ। সেখানে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ তদন্ত শুরু হলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এছাড়াও আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।