গর্ভাবস্থায় কোন ধরণের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

একজন নারীর কাছে সবচেয়ে আনন্দদায়ক মুহূর্ত হলো মা হওয়া। যখন একজন নারী বুঝতে পারে তার গর্ভে লালিত হচ্ছে আরেকটি প্রাণ তখন সে আনন্দ পৃথিবীর শ্রেষ্ট আনন্দ। কিন্তু সামান্য ভুলের কারণে ঘটে যেতে পারে অঘটন। বিশেষ করে খাবার গ্রহণে অসচেতন হলে ঘটতে পারে মারাত্বক বিপর্যয়। একজন মায়ের জন্য গর্ভকালীন সময়টি যেমন সুন্দর তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার নয় মাস প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয় সচেতনতার সঙ্গে।

গর্ভাবস্থায় নারীর সুষম খাদ্যের প্রয়োজন যা শিশুর বেড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া থেকে শুরু করে মা ও শিশুর শরীরে পুষ্টি যোগায়। তবে যখন যা মন চায় তা খাওয়া যাবে না। কারন এমন অনেক খাবার আছে যা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো কিন্তু গর্ভাবস্থায় সেসব খেলে মা ও শিশুর বিপদ হতে পারে। তাই খাবার গ্রহণে খুব সচেতন হতে হবে এই সময়।

জেনে নিন যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন-

অতিরিক্ত পরিমানে ক্যাফেইন
চা, কফিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যাফেইন যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। অতিরিক্ত পরিমানে ক্যাফেইন গ্রহণ কম ওজনবিশিষ্ট শিশু জন্মের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এছাড়া গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা গর্ভাবস্থায় নারীদের প্রতিদিন ২০০ গ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করার পরামর্শ দেন।

প্রক্রিয়াজাত মাংস
সসেজ, বিভিন্ন ধরনের ক্যানজাত বা প্যাকেটজাত মাংস গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলতে হবে। কারন এতে থাকা লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে ভ্রুণের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া পোল্ট্রি বা ফার্মজাত মুরগি, মাছ খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক টুনা, ম্যাক্রেল এ রয়েছে প্রচুর পরিমানে মার্কারি থাকে।

অতিরিক্ত পরিমানে মার্কারি গ্রহণ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর যা শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং বিকাশজনিত সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলতে হবে।

লবনজাত খাবার
গর্ভাবস্থায় লবণজাত খাবার  শরীরে ‘প্রিক্লাম্পসিয়া’ নামক একটি জটিল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে যেখানে শরীরে পানি এসে শরীর ফুলে । এর ফলে শরীর ফোলে এবং সময়ের আগে অপরিণত শিশু জন্ম হয়।

কাঁচা মাছ
গর্ভাবস্থায় কাঁচা মাছ খাওয়া যাবে না। চাইনিজ জাপানিজ বিভিন্ন খাবার যেমন সুসি, সশিমি এগুলোতে কাঁচা মাছ ব্যাবহার করা হয়। এই কাঁচা খাবারগুলোর মাধ্যমে শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

অপাস্তরিত চিজ বা পনির
চিজ বা পনির তৈরি করা হয় কাঁচা দুধ থেকে। এই ধরনের অপাস্তরিত চিজ গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারন এতে লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পেঁপে

গর্ভাবস্থায় পেঁপের মতো পুষ্টিকর একটি ফল এবং কাঁচা পেঁপের মতো উপকারী সবজি খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদানগুলোই গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। যেমন: এতে রয়েছে পেপসিন এবং পাপাইন যা ভ্রূণের জন্য এতটাই ক্ষতিকর হয় যে ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

আনারস

আনারসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশ কিছু রোগের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এতে থাকা উৎসেচক খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যানসারের আশঙ্কা কমায়। তবে গর্ভাবস্থায় আনারস একেবারেই নিষেধের তালিকায় রাখেন চিকিৎসকরা।

কেন এড়ানো উচিত: আনারসে থাকা ব্রোমিলিন নামক উৎসেচক শরীরের কিছু প্রোটিনের গঠন ভেঙে দেয়। এটি খেলে সারভিক্সের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে । এমনটা হলে শিশুর সময়ের আগেই জন্ম হতে পারে। এছাড়াও আনারসের কারণে জরায়ুতে বিপজ্জনক সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয় (Pineapple During Pregnancy)।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *