~সৈয়দা সুলতানা সুইটি
লক্ষ্য হচ্ছে জীবনের গতি নির্ধারণ।
❝লক্ষ্যবিহীন জীবন মাঝিবিহীন নৌকার মতো❞ তা আমরা সবাই জানি।
যে বিশেষ মর্যাদা দান করে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, তার জন্যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কারণ, মানুষকে এখানে অর্থাৎ এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় নিরর্থক পাঠানো হয়নি।
❝তোমরা কি (সত্যি সত্যিই) এটা ধরে নিয়েছ ,আমি তোমাদের এমনিই অনর্থক পয়দা করেছি এবং তোমাদের (কখোনই) আমার কাছে একত্রিত করা হবেনা??❞
(সূরা মুমিনুন: ১১৫)
মানবজীবনের মূল লক্ষ্য কি হওয়া উচিত, সে কথাও আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন।
মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন,
❝আমি মানুষ ও জ্বিনকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি।❞
(সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)
অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতই মানুষের জীবনের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য।
কিন্ত দুঃখের বিষয়…!
যদি কোনো স্টুডেন্টকে প্রশ্ন করা হয়,
-❝তোমার জীবনের লক্ষ্য কী?❞
উত্তরে ৯৭% স্টুডেন্ট বলবে- ডাক্তার হওয়া, প্রকৌশলী হওয়া বা আইনজীবী হওয়া কিংবা শিক্ষক হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি… ।
এই একই প্রশ্ন যদি একজন ব্যবসায়ীকে করা হয়, তখন সে হয়তো বলবে, “”বিল গেটস কিংবা জ্যাক মা এর মতো একজন বিজনেস ম্যাগনেট হতে চাই।””
শিক্ষা সমাপনী কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, সে উত্তর দেবে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, জনসেবক হওয়া।
কিন্তু কেউই এরূপ উচিৎ জবাব দেবে না, যে, ❝আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং মৃত্যুর পর পরিণামে তাঁর অসীম দয়ায় জান্নাত লাভ করা এবং অবর্ণনীয় মহাকঠিন শাস্তির স্থান জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়া।❞
এটা অবশ্য স্বাভাবিক যে, ব্যক্তিভেদে তাদের জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যার মধ্যে সে তার জ্ঞাতসারে সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তির স্বপ্ন খুঁজে ফেরে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাণপণ লড়াই করতে থাকে, কারও স্বপ্ন হয়তো বাস্তবায়ন হতেও পারে…৷ আবার কারও
হয়তো মাঝ পথে জীবন প্রদীপ কিংবা আকাঙ্ক্ষার প্রদীপ নিভেও যায়…।বাস্তবিত হয় না তার সেই সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তির স্বপ্নটি……!
কিন্তু আমাদের জীবনের লক্ষ্য এবং সফলতার স্বপ্নটি কি এই সূত্রেই গাঁথা উচিত?
কখনো কি ভেবে দেখেছেন…? আখিরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মানুষের জন্য তার মূল লক্ষ্য কী নির্ধারণ করা উচিৎ ছিল? এবং সর্বোচ্চ সফলতা প্রাপ্তি কোথায় নিহিত আছে??
মহান আল্লাহ পাক আমাদের লক্ষ্য এবং সফলতার স্বপ্নটি কোন সূত্রে গাঁথা উচিত তা সুস্পষ্ট করেছেন,, কোথায় করেছেন..?
সেই মহিমান্বিত আল-কুরআনুল কারীমে।
❝তাই যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করে চলো। শোন, আনুগত্য করো এবং নিজেদের সম্পদ ব্যয় করো। এটা তোমাদের জন্যই ভালো। যে মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকলো সেই সফলতা লাভ করবে।❞
(সূরা আত-তাগাবুন: ১৬)
সাধারণত আমাদের সকলের ধ্যান-ধারণা, কাজকর্ম, চিন্তা-ভাবনা সবকিছুই এই অস্থায়ী পৃথিবীর অত্যন্ত স্বল্পকালীন আয়ুর ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়। এই অস্থায়ী দুনিয়ায় সাফল্যের জন্য আমরা কত কিছুই না করি!
কিন্তু সেই পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে সাফল্য লাভের জন্য আমরা কি করছি…?
আখিরাতের সাফল্য লাভের ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে পরিচালিত জীবনের সংখ্যা অতি নগণ্য।
যার প্রমাণ, আমাদের জীবনের লক্ষ্য একমাত্র জাগতিক ভিত্তিক। পরলৌকিক ভিত্তিক নয়।
সত্যিকার অর্থে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমের প্রত্যেকটি কার্যকলাপ, ধ্যান-ধারণা হওয়া উচিত চিরস্থায়ী জীবনকে সামনে রেখে। সে ক্ষেত্রে ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ, অসৎ কাজগুলি থেকে সরে থাকা বাঞ্ছনীয়, অথচ সে অবস্থান কতো দূরে? কিংবা বহু দূরে।
এ প্রসঙ্গে ইমাম গাযযালী রহ. একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন-
❝ তুমি দুনিয়াতে যতদিন অবস্থান করবে ততদিনের জন্যে কাজ কর এবং পরকালে তোমাকে যে পরিমাণ সময় কাটাতে হবে, সে পরিমাণ সময়ের
জন্যে কাজ করো।❞
যদি আমরা আগ্রহী ও আকৃষ্ট হতাম আল্লাহ তা’য়ালা ও তার রাসূল (স.) এর আদেশকৃত বা সৎকাজগুলোর প্রতি, তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো। কারণ, পরকালমুখী হওয়া বা স্মরণে রাখা মানে আল্লাহতা’য়ালাকে ভয় করা এবং আযাব, গজব ইত্যাদি আল্লাহর নির্দেশই হচ্ছে, তা কুরআনের আলোকে দৃঢ় বিশ্বাস করতে হবে, ফলে এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ মতে আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তওবা ও ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
আর আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করার মাধ্যমে একজন মানুষ মহান আল্লাহর কছে মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত হতে পারেন। এই মর্মে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,
❝আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে হতে সর্বাধিক সম্মানিত সে ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন।❞
(সূরা-হুজরাত, আয়াত-১৩)
মূলতঃ আমাদের লক্ষ্য থাকে দুনিয়ায় সম্মান লাভ, এটাই আমাদের কাছে সাফল্য!!
কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি? আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার চেয়ে বড় সফলতা আর কি আছে? তাঁর দেয়া লক্ষ্যকে নির্ধারণ ছাড়া কি করে সফলতা সম্ভব..?”
কবি ও লেখক পরিচিতি
Syeda Sultana Sweety
Student
283/B,J.N shaha road, Lalbag, Dhaka-1211